রোজা হলো লৌকিকতামুক্ত ইবাদত। অন্য সব ইবাদতে লোক দেখানোর প্রবণতা থাকতে পারে, কিন্তু মানুষ পানাহার থেকে বিরত থাকে শুধু আল্লাহর জন্যই। ব্যতিক্রমী এই ইবাদতের পুরস্কার হিসেবে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল (স.)। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।’ (সহিহ বুখারি: ২৮৪০)
ইবাদত কবুলের মালিক আল্লাহ তাআলা। এরপরও ইবাদত কবুল হচ্ছে কি না—তা বুঝার কিছু আলামত রয়েছে। যেমন- আমল কবুল না হওয়ার ভয় থাকা। আয়েশা (রা.) একবার নবীজি (স.)-কে পবিত্র কোরআনের আয়াত—‘আর যারা দান করে এবং তাদের অন্তর ভীত কম্পিত’ এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন- এরা কি তারা, যারা মদ পান করে এবং চুরি করে? নবীজি (স.) বলেন, ‘না হে সিদ্দিক তনয়া, বরং এরা হলো ওই সব লোক, যারা সিয়াম পালন করে, সালাত (নামাজ) আদায় করে, সদকা দেয়। অথচ তাদের পক্ষ থেকে এসব কবুল না হওয়ার আশঙ্কা করে। এরাই তারা, যারা কল্যাণের দিকে দ্রুত ধাবমান এবং তার দিকে অগ্রগামী।’ (তিরমিজি: ৩১৭৫)
আরেকটি আলামত হলো- ইবাদত কবুলের আশা করা। যখন আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশার মিলন ঘটে, তখন ইবাদতে খুশুখুজু আসে। ইবাদত কবুলে তা সহায়ক ভূমিকা রাখে। মহান আল্লাহ জাকারিয়া (আ.) ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাপারে বলেন, ‘তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর আমাকে আশা নিয়ে ও ভীত হয়ে ডাকত, আর তারা ছিল আমার প্রতি বিনয়ী।’ (সুরা আম্বিয়া: ৯০)
এছাড়াও বান্দা যখন গুনাহকে অপছন্দ করতে শুরু করবে এবং তাতে প্রত্যাবর্তন তার কাছে অপ্রিয় হবে, তখন বুঝতে হবে- তার ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে। ‘মাদারিজুস সালেকিন’ নামক গ্রন্থে আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, গুনাহের কল্পনা যদি কাউকে আনন্দ দেয় (সে গুনাহে লিপ্ত থাকতে পছন্দ করে এবং পাশাপাশি ইবাদতও করে) তবে সে ৪০ বছর ইবাদত করলেও তা কবুল হবে না।
রোজার ব্যাপারে হজরত ইয়াহইয়া ইবন মুআয (রহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জবানে ইসতেগফার করে অথচ তার অন্তর গুনাহের সঙ্গে আবদ্ধ। আর তার সংকল্প হলো, সে আবার গুনাহের কাছে ফিরে যাবে, তাহলে তার রোজা প্রত্যাখ্যাত এবং কবুলের দরজা তার সামনে রুদ্ধ।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা-২১৫)
ইবাদত কবুলের এটাও একটি চিহ্ন যে ইবাদত করতে আগ্রহী হওয়া, ইবাদতে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়, জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’ (সুরা আর-রাদ: ২৮)
সুতরাং রোজা পালনের মাধ্যমে যদি কারও অন্তরে গুনাহর প্রতি ঘৃণাবোধ ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি ঝোঁক বাড়ে, তাহলে আশা করা যায়, ওই রোজা কবুল হওয়ার উপযোগী।
শুধুমাত্র পানাহার থেকে বিরত থাকলেই রোজা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় না। প্রকৃত রোজা হলো সেটাই- যে পানাহার বর্জনের পাশাপাশ অসার ও অশ্লীল কথা ও কর্ম থেকেও বিরত থাকে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও অশ্লীল কাজ ও পাপাচার ত্যাগ করতে পারল না, তার পানাহার ত্যাগ করার কোনো মূল্য নেই।’ (বুখারি: ৬০৫৭, ইবনে মাজাহ: ১৬৮৯)
তাই কোনও ব্যক্তি যদি রোজা রাখার পর মিথ্যা কথা, গিবত, অন্যকে গালাগালি, কাউকে অপমান করা এবং অন্যের প্রতি শত্রুতা পোষণ থেকে বিরত থাকতে পারে, তবে আশা করা যায় তার রোজা কবুল হচ্ছে। আর বান্দা তো আল্লাহর কাছে শুধু প্রত্যাশাই করতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের রোজাগুলো কবুল করুন। আমিন।