জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগানো, প্রচারপত্র বিতরণ ও অনলাইনের প্রচারণাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। তবে দেশে হিযবুত তাহরীরের কোনো শক্ত অবস্থান না থাকলেও তারা সংগঠিত হতে চেষ্টা করছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি থাকার ফলে তারা বাংলাদেশে কোনো শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারছে না।
রাজধানীর সবুজবাগ, মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা, ফার্মগেট, শাহবাগ, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে হিযবুত তাহরীরের পোস্টার দেখা গেছে। গত সেপ্টেম্বরেও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় হিযবুত তাহরীরের পোস্টার দেখা গেছে। তবে এসব কাজ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অগোচরে হয়েছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ।
জানা যায়, ১৯৫৩ সালে জেরুজালেমে তোকি উদ্দিন আল নকানি এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে তাদের কর্যক্রম শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে কর্মকাণ্ড শুরু হয়। ২০০১ সালে মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সেমিনারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। বিশ্বের অর্ধশত দেশে বর্তমানে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
দেশগুলো হলো- আমেরিকা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, সুদান, লিবিয়া, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক উল্লেখযোগ্য। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ান ফেডারেশন, পাকিস্তান, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, কাতার, সুদান, ওমান, জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক, মিসর, লিবিয়া, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, আজারবাইজান, তুরস্ক ও তিউনিশিয়া সরকার হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
২০০৯ সালের অক্টোবরে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও ১৪ বছরযাবত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। গত ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের আসকারদিঘীর পাড় এলাকা থেকে আবু হাসান মো. তানভীর (২৮) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শহীদুল ইসলামকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তারা জিজ্ঞাসাবাদে শহীদুল ও আদিল নামে আরও দুই জনের নাম বেরিয়ে আসে।
চট্টগ্রাম হালিশহর থানার এলাকায় অভিযান চালিয়ে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ৮ বছরযাবত পলাতক ‘হিযবুত তাহরীর’র সদস্য মো. সাহেদ হোসাইন ওরফে সাকেরকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে। গত ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার র্যাব সদস্যরা রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে শীর্ষ নেতা আহম্মেদ নিজামকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে। গত ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে খুলনা মহানগরী হরিণটানা এলাকা থেকে সংগঠনের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হিজবুত তাহরীর খুলনা অঞ্চলের প্রধান আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকি (৩৬)। মো. শাকিল আহম্মেদ (২৬), রিজভী আজিম খান (২৭) ও মেহেদী হোসেন সালিত (২৪)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি ল্যাপটপ, ৬টি মোবাইল ফোন, দুইটি পেনড্রাইভ, একটি এটিএম কার্ড এবং হিযবুত তাহরীর সংশ্লিষ্ট বইয়ের ১০টি প্রিন্ট কপি জব্দ করা হয়।
এদিকে গত ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ব্রিটেন। গত ১৫ জানুয়ারি সোমবার ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, ১৯ জানুয়ারি থেকে ইসলামপন্থি দলটি যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে করে এটি আল কায়েদা ও আইএসআইএস এর মতো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মাহফুজুল আলম রাসেল জানান, দেশে হিযবুত তাহরীরের কোনো শক্ত অবস্থান নেই। যেসব নিষিদ্ধ সংগঠন বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক কাজ করে তাদের সরাসরি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ খুবই কম। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব পর্যায়ে মনিটরিং থাকায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সহজ হচ্ছে।