ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোকে থার্ড পার্টি লজিস্টিকস (টিপিএল) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান- পেপারফ্লাই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটি আকস্মিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১,০০০ কর্মী বেকার হয়েছেন।
জানা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের থেকে প্রতিশ্রুত তহবিল না পাওয়া, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান- সিভিসি ফাইন্যান্সের কাছে তাদের তহবিল আটকে থাকার ঘটনাকে এজন্য দায়ী করেছে কোম্পানিটি।
বাংলাদেশের ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ই-ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এম শাহাব উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তহবিল সংকটে পেপারফ্লাই যদি কার্যক্রম চালাতে না পারে, তাহলে দেশে এ শিল্পের জন্য সেটি হৃদয়বিদারক ঘটনা হবে।
দেশের ই-কমার্স ইকোসিস্টেমের অপরিহার্য চাহিদা– লাস্ট মাইল ডেলিভারি (গ্রাহকের দ্বারপ্রান্তে পণ্য সরবরাহের সেবা)। পেপারফ্লাই এর মতো প্রতিষ্ঠান যা জোরালো করতে অবদান রেখেছে।’ প্রতিষ্ঠানটি 'কমপ্ল্যায়েন্ট ভাবেই' বিকশিত হচ্ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
২০১৬ সালে স্থানীয় চার উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠা করেন পেপারফ্লাই। ২০২১ সালে ভারতের টিপিএল ব্যবসার জায়ান্ট ইকম এক্সপ্রেস থেকে ১০০ কোটি টাকা শেয়ার বিনিয়োগ পাওয়ার পরে পেপারফ্লাই গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ ও সংগ্রহ (পিকআপ সার্ভিস)- উভয় ধরনের সেবা প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে।
কুরিয়ার সার্ভিসকে স্মার্ট লজিস্টিকসে রূপান্তরের এই যাত্রায় ২০২২ সালের এপ্রিলে আরও ১০২ কোটি টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পায় তারা। কিন্তু, এরমধ্যে বৈশ্বিক বিনিয়োগের পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন আসার পর– তা আর রক্ষা করা হয়নি।
এদিকে আসন্ন এই অর্থপ্রাপ্তির ওপর আস্থা রেখে পেপারফ্লাই ২০০-র বেশি সরবরাহ কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের পরিধি বিস্তার করে। নিয়োগ দেয় ২ হাজারের বেশি কর্মীকে। এক্ষেত্রে তারা উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীদের সমর্থনপুষ্ট স্মার্ট লজিস্টিকস ফার্ম- রেডএক্সের সাথে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে।
দারাজ- এর মতো বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর সেবাদাতা রেডএক্স। বাজারের এই অংশ নিয়ে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে পেপারফ্লাইকে।
মহামারিকালে যখন বিশ্বব্যাপী সুদহার কম ছিল, তহবিল পাওয়া ছিল সস্তা, তখন বিনিয়োগকারীরা যেকোনো মূল্যেই হোক নব-উদ্যোগগুলো যেন ব্যবসা সম্প্রসারণ করে- সেদিকে জোর দিয়েছিল।
কিন্তু, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা এবং সুদহার নতুন উচ্চতা লাভ করায়– তারা এখন প্রযুক্তি-ভিত্তিক স্টার্টআপের ওপর বাজি ধরার বিষয়ে সর্তক হয়েছেন। পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণবাদী মনোভাবই দেখা যাচ্ছে।
মহাখালীর এসকেএস টাওয়ারে ছিল পেপারফ্লাইয়ের প্রধান কার্যালয়। বিনিয়োগ প্রবাহে এই মন্দ অবস্থায় চলতি বছরের শুরুতে এই অফিস তারা সরিয়ে নেয় নিকটবর্তী তাদের একটি ওয়্যারহাউজে। এভাবে খরচ কিছুটা কমলেও, তখনও তাদের প্রায় এক হাজার কর্মী ছিল, যাদের পেছনে প্রতিষ্ঠানের মাসিক ব্যয় হচ্ছিল ৭০ লাখ টাকা।
পেপারফ্লাই এর ৮০ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ইকম এক্সপ্রেসের কাছে। ইকমের অভ্যন্তরীণরা জানান, ১০ কোটি টাকায় এই মালিকানা বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছিল।