‘একটা চাকরির খুব দরকার ছিল। কিন্তু এত সহজে শুধুমাত্র আবেদন ফি দিয়ে পুলিশের চাকরি পেয়ে যাব, তা কখনো ভাবিনি। বাবা নেই, সংসার সামলাতে মায়ের কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেছি। টিউশনি করে নিজের পড়ালেখা করেছি। এখন পুলিশে চাকরি পেয়েছি, আম্মুকে আর কষ্ট করতে দেব না।’
বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে নির্বাচিত হয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের মৃত সিরাজুল ইসলামের সন্তান সাজিদুল ইসলাম চৌধুরী সিহাব (১৮)। ফেনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৪৭ জন তরুণ ও ৮ জন তরুণীসহ মোট ৫৫ জন এ পদে চূুড়ান্তÍ ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পরীক্ষায় জেলা থেকে মাত্র ১০৪ টাকা ফি দিয়ে ১ হাজার ৪৩৪ জন প্রার্থী অনলাইনে আবেদন করেন। যার মধ্যে শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নেন ১ হাজার ১২৩ জন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে তিনটি ধাপ পেরিয়ে লিখিত পরীক্ষায় জন্য মনোনীত হন ৩৭৩ জন। যার মধ্যে ৩৭২ জন পরীক্ষায় অংশ নেন এবং ১৭৮ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। চূড়ান্ত ফলাফলে ৫৫ জনকে কনস্টেবল পদের জন্য নির্বাচিত করা হয়।
চাকরি পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সাজিদ বলেন, ২০১৪ সালে অসুস্থজনিত কারণে বাবা মারা যায়। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। আমার আরও দুই ভাই রয়েছে। পারিবারিক খরচসহ আমাদের পড়ালেখা নানাদের সহযোগিতায় আমার মা কষ্ট করে চালিয়েছেন। পড়ালেখার জন্য টিউশনি করেছি, কষ্ট করে পড়েছি। খুব আশায় ছিলাম একটা চাকরির জন্য৷ এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর সহজেই চাকরি পেয়েছি।
ছেলের সফলতা দেখে সাজিদুল ইসলামের মা সোনিয়া বেগম বলেন, কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছি। সে নিজেও অনেক কষ্ট করেছে। পরিবারের অন্য কোন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নেই। ছেলে চাকরি পেয়েছে এতেই আমি অনেক খুশি। ওর বাবা মারা যাওয়ার আগে অনেক কষ্ট করেছে। আজ তিনি থাকলে আরও বেশী খুশী হতেন। কনস্টেবল পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মিজানুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান।
চাকরি পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাবা দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে রয়েছেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ। এখন আমি চাকরি পেয়েছি, তিনি নিশ্চিন্তে দেশে আসতে পারবেন। আমি খুশি। এত অল্প টাকায় শুধুমাত্র আবেদন ফি খরচ করেই চাকরী পেয়েছি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারব, দেশের সেবায় কাজ করতে পারব। এটি ভালো লাগছে।
পুলিশ বিভাগ সূত্র জানায়, পুরুষদের মধ্যে সাধারণ কোটায় ২৬ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৪ জন, আনসার ভিডিপি কোটায় ২ জন এবং পুলিশ পোষ্য কোটায় ৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন এবং নারীদের মধ্যে সাধারণ কোটায় নারী ৬ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১ জন, পুলিশ পোষ্য কোটায় ১ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। নির্বাচিত হওয়া এসব তরুণ-তরুণীদেও ফ্রি মেডিকেলের জন্য ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাঠানো হবে। এরপর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের ছয় মাসের জন্য প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের চাকুরীতে নিয়োগ প্রদান করা হবে।
আত্মতৃপ্তির কথা বললেন পুলিশ সুপার :
নিয়োগ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে নিজেকে আত্মতৃপ্ত বলেছেন পুলিশ সুপার জাকির হাসান। তিনি বলেন, আমি খুবই উৎফুল্ল। বেছে বেছে ৫৫ জন মেধাবী মুখ বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নিয়োগ করতে পেরেছি। পুলিশ সুপার হিসেবে এটি আমার জন্য প্রথম নিয়োগ কার্যক্রম যা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সরকারের জন্য মেধাবী ও দক্ষ পুলিশ জনবল নিশ্চিত করতে পেরেছি এতে আমার ভালো লাগছে।
নিয়োগের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া অনেক বেশি স্বচ্ছ হয়েছে। অনেক কৌশলে সুন্দরভাবে নিয়োগগুলো হয়। এখন পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করলে বেশি সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে মেধাবীদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে।
নি বলেন, কনস্টেবল নিয়োগের ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতার প্রয়োজন রয়েছে। মেধাবীদের নেওয়ার ফলে দ্রুত পুলিশের বিভিন্ন কৌশল ও পাঠগুলো আয়ত্ত করতে পারবে। এতে করে আগের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ পুলিশ বিভাগ গড়ে উঠবে। ভবিষ্যতের পুলিশ অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।
জ/আ