গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যারা আক্রান্ত, তারাই জানেন কতটা অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা এটি। সামান্য তেলের ভাজাপোড়া অথবা মসলাযুক্ত খাবার খেলেই শুরু হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। গ্যাসের সমস্যা হলে সাধারণত বুক, এবং গলায় জ্বালাপোড়া করতে থাকে।
গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ: অখাদ্য বলতে যে সকল খাবারে অতিরিক্ত মসলা, ভেজাল মসলা, পামওয়েল, টেস্টিং সল্ট, কনডেন্সড মিল্ক, সাদা চিনি, ডালডা, কাপড়ের রঙের মিশ্রণ, অতিরিক্ত তেল থাকে, পঁচা-বাসি খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চা-কফি পান খেলে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত খাবার খেলেও গ্যাস্টিক হতে পারে। পাকস্থলিকে যদি আমরা তিনভাগে ভাগ করি, তাহলে একভাগ খাদ্য, একভাগ পানি এবং একভাগ খালি রাখা উচিৎ।
গ্যাস্টিকের লক্ষণগুলো কি কি অথবা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হতে পারে :
*গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে খিদে কম পায়
*পেটে গ্যাস হয়
*বুক জ্বালা করে ও পেটের মাঝখানে চিনচিন ব্যথা
*বুক ও পেটে চাপ অনুভূত
*হজমে অসুবিধা এবং বমি হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক থেকে বাঁচতে ৫ অভ্যাস বাদ দিন: গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেননি, এমন কাউকে পাওয়া যাবে কি? আমাদের পাকস্থলীর গায়ে সুক্ষ্ম একটি ঝিল্লি থাকে। খাবারের অ্যাসিড ও ক্ষতিকর জীবাণু থেকে পাকস্থলীকে বাঁচায় এই ঝিল্লি। যদি কোনো কারণে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে অ্যাসিডের সংস্পর্শে সেখানে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। আর এটিই হলো গ্যাস্ট্রাইটিসের লক্ষণ। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে ঠিক রাখতে হবে হজম প্রক্রিয়া। সেজন্য কিছু অভ্যাস বাদ দেওয়া জরুরি-
*ধূমপান ও অ্যালকোহল
*খাবারে অনিয়ম
*অল্প চিবিয়ে খেয়ে ফেলা
*একসঙ্গে অনেক ধরনের খাবার খাওয়া
*খাবারের পরপরই পানি পান করা
গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না: যারা হজমের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকে ভুগছেন, তাদের খুব বেশি ছোলা না খাওয়াই ভালো। একইসঙ্গে যারা কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, তারাও ছোলা খাওয়া এড়িয়ে যান।
*মুখি কচুর তরকারি খেতে পছন্দ করেন অনেকে। যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে, তাঁদের বেশি সবজি না খাওয়াই ভালো। এতেও পেটের সমস্যার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়।
*গরমের সময় এঁচোড় আনা হয় প্রায় সব বাড়িতেই। খেতে সুস্বাদু হওয়ার কারণে একে গাছপাঁঠা নামেও ডাকা হয়ে থাকে। তবে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই সবজি গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য একেবারেই ভালো নয়।
*গরমে পাওয়া না গেলেও, শীতের সবজি মুলাও কিন্তু বেশ ভয়ানক গ্যাসট্রিকের রোগীদের জন্য। এটি গ্যাসের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া-সহ একাধিক সমস্যা দেখা দেয় মুলো খেলে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হলে কি করবেন:
*খাবার খাওয়ার পর সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়বেন না।
*অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
*যেসকল শাক-সবজি সহজে হজম হয় না ( যেমন- বাধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, পালংশাক ইত্যাদি ), খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
*গ্যাস হলে যেকোনো ধরণের ডাল জাতীয় খাবার যেমন – মসুর ডাল, বুট, ছোলা, খেসারি ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ওষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করার উপায়
*ব্যায়াম : যেকোন ধরণের ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ব্যায়াম মানুষের ক্ষুধা এবং হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া ব্যায়াম করলে পেটে চর্বি এবং গ্যাস জমতে পারে না।
*দই এবং মাঠা : গ্যাসের সমস্যা হলে সাথে সাথে একটু দই খাওয়ার চেষ্টা করুন। দই এবং মাঠায় রয়েছে প্রোবায়টিক রাসায়নিক উপাদান, যা হজম করতে সাহায্য করে।
*রসুন : গ্যাসের সমস্যা নিরাময়ে রসুন অসাধারণ একটি পথ্য। গ্যাসের সমস্যায় এক কোয়া কাঁচা রসুন খেয়ে নিলে এসিডের ক্ষরণ ঠিক হতে শুরু করবে।
*আদা : আদা একটি কার্যকরী অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা গ্যাস বা অম্বল সমস্যা দূর করে। আদা চুষে বা চা করে খেতে পারেন।
*শসা : শসা একটি স্বাস্থসম্মত খাবার। পেট ঠান্ডা রাখার কার্যকরী সমাধান। এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান এবং ফ্লেভানয়েড যা গ্যাসের ব্যাথা এবং জ্বালাপোড়া কমিয়ে আনে।
*লবঙ্গ : লবঙ্গ তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে পারে। ২-৩ টি লবঙ্গ দানা মুখে নিয়ে চুষতে থাকুন, গ্যাসের সমস্য দূর হবে।
*ডাবের পানি : ডাবের পানি পাকস্থলির সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ডাবের পানি হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । গ্যাসের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিন ডাবের পানি পান করুন।