বাঙালির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজন। অতীতে গ্রামাঞ্চলে শিশু জন্ম গ্রহণ করলে কিংবা গাভীর বাচ্চা হলে নাড়ি কাটার জন্য ব্যবহার করা হত কচি বাঁশের ধাঁরালো মাথা।
মুসলমান কেউ মারাগেলে কবরের ওপর বাঁশের মাচা করে কিংবা ফাঁটিয়ে বিছিয়ে দেয়া হয়। হিন্দু হলেও মৃত্যুর পর শ্মশানে নেয়া থেকে শুরু করে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাঁশের ব্যবহার করা হয়।
কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচীর লেখা কবিতা
‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শ্লোক বলা কাজলা দিদি কই’।
কবির লেখা আজ ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছে। বিলুপ্তির পথে কবির সেই বাঁশবাগান। বর্তমানে সিরাজগঞ্জে দু’একটি এলাকা ছাড়া কোথাও বাঁশবাগান দেখা যায় না।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ কর্ণসুতি, বাশবাড়িয়া তাজুরপাড়ার, অধিকাংশ এলাকা এক সময় বাঁশবাগানে সমৃদ্ধ ছিল। গ্রামের যৌথ পরিবার ক্রমান্বয়ে ভেঙে একক পরিবার হবার কারণে মানুষের প্রয়োজনে ও কালের বিবর্তনে বাঁশবাগান নির্মূল, আবাদি জমিতে বাড়িঘর করা হয়েছে।
আর একারণেই বাশ বাগানে তেমন বাঁশ না থাকায় এখন এর দাম বেড়েই চলেছে। জানা যায়, গত কয়েক বছরে বাঁশবাগানগুলি নির্মূল করা হলেও নতুন বাগান করা হয়নি। ফলে বাঁশের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বাড়ছে না।
ধলেশ্বর গ্রামের তালেব মন্ডল,রসুলপুর গ্রামের সতিষ চন্দ্র জানান, এক সময় এই উপজেলায় ৯০ শতাংশ ঘর ছিল বাঁশের খুঁটির উপর নির্ভরশীল । এছাড়াও ঘরের বেড়া, চালা, অবকাঠামো নির্মাণ রান্নাঘর ও কৃষি ক্ষেতসহ পরিবারের অনেক কাজেই বাঁশের ব্যবহার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ।
তাছাড়া শহরে পাকা ঘরবাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট, ছাদ ঢালাইসহ অন্যান্য কাজে বাঁশের ব্যবহার ছিল অপরিহার্য্য। সিরাজগঞ্জ শেখ রাসেল পার্ক যমুনায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা বাঁশ বিক্রেতা,আলিমুদ্দিন,মজিদ শেখ জানায়, কিছুদিন আগেও একটি বাঁশের দাম ছিল ১৫০ টাকা সেই বাঁশের দাম বেড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মূল্যবৃদ্ধির ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ ঘর-বাড়ি তৈরি সহ বাশজ শিল্পের সাথে জড়িতরা পড়েয়ে বিপাকে। ফলে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জ সহকারি বন সংরক্ষক মোহাম্মাদ হোসেন বলেন, ইতি পূর্বে জেলায় অনেক বাঁশ ঝাড় ছিল। কিন্তু যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার ব্যাপকহারে গঠিত হওয়ায় বসত বাড়ীর জন্য বাঁশঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে।
অন্যান্য ফলের বাগানের মত বাঁশ ঝাড় সংরক্ষণের জন্য সরকারি সহযোগীতা দেয়া হলে লোকজন বাঁশের বাগান করতে আগ্রহী হবে।