
গোটা আরবভূমি মহান আল্লাহ পাকের নিদর্শনে যেমন আচ্ছাদিত, তেমনি নিয়ামতেও পরিপূর্ণ এক মহা পবিত্র স্থান। আমরা সকলেই জানি মহান আল্লাহ পাকের পবিত্র ঘর কাবা এই আরবের মক্কা নগরীতেই অবস্থিত।
প্রতিদিন সেখানে নামাজ আদায়, ওমরাহসহ ধর্মীয় নানা কাজে বিশ্বেও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে যান লাখো মুসলিম। বিশেষ করে প্রতি বছর লাখ-লাখ মুসলিম আল্লাহ পাকের নির্দেশে ছুটে যান পবিত্র হজ পালনে। হজ পালনের উদ্দ্যেশ্য কী তা আমরা সকলেই অবগত রয়েছি। একমাত্র আল্লাহর রাজী খুশির জন্যই আমরা হজ পালন করে থাকি। হজ পালন শেষে আমরা মদীনার মসজিদে নববীতে যায়। যেখানে নবী করিম (সঃ) এর রওজা মোবারক রয়েছে। এই রওজা মোবারকের আশপাশে যেসব দুয়ো কবুলের জায়গা রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম রিয়াজুল জান্নাত এবং যেখানে নবীজী বসে বাইয়াত করতেন।
আরও একটি জায়গা আছে যেখানে হযরত জিব্রাইল (আঃ) আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে ওহি নাজিল করতেন। এগুলো সব হুজরাখানার ভেতরে। হুজরাখানার বাইরে এমন একটি জায়গা রয়েছে, যে জায়গাটির খবর অনেকেই জানেন না। সেই জায়গাটি হচ্ছে ‘বীরে সুক্বয়া’। এই বীরে সুক্বয়ার পানি যেমন মিষ্টি ছিল তেমনি খুবই সু’স্বাদু ছিল। নবীজী এই কুয়ার পানি খুবই পছন্দ করতেন। শুধু তাই নয় এই কুয়ার কাছে একটি খেজুর গাছ ছিল। নবীজী সুযোগ পেলেই কুয়ার কাছে গিয়ে সময় কাটাতেন এবং কুয়ার পানি পান করতেন। এমন সময় পবিত্র কুরআনের চতুর্থ সুরার প্রথম আয়াত নাযিল হলো।
যেখানে আল্লাহ তা’য়ালা ঘোষণা দিয়েছেন, তোমরা তোমাদের প্রিয় জিনিসটি আল্লাহ’র রাস্তায় দান করলে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তোমাকে জান্নাত দান করবেন। ওই আয়াতটি জানার পর কুয়ার মালিক হযরত সাআদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) ওই জমিটিসহ কুয়াটি নবীজীকে ওয়াকফ করে দেন। বীরে সুক্বয়া এটি সুক্বয়া নামক স্থানে হওয়ায় এটি বীরে সুক্বয়া নামে পরিচিতি লাভ করে।
মসজিদে সুক্বয়ার দক্ষিণ পাশে রেল স্টেশনের বাইরে ছিল এর অবস্থান। হিজরী চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সড়কের প্রয়োজনে কুয়াটি মিটিয়ে দেয়া হয়। নবী করিম (সঃ) যখন বদর যুদ্ধে রওনা হন, পথিমধ্যে সুক্বয়া নামক স্থানে এসে সৈনিক নির্বাচন করেন। তিনি এখানে মদীনাবাসীদের জন্য বরকতের দুয়া করেন। মদীনার হারামের ঘোষণা করেন। আম্বারিয়া রেল স্টেশনের দেয়ালে ঘেরা স্থানের মধ্যে মসজিদটি অবস্থিত।
এখানে হযরত ওমর (রাঃ) রসুল (সঃ) এর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) এর ওসিলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দুয়ো করেছিলেন। বর্তমানে বীরে সুক্বয়ার অবস্থান হচ্ছে মসজিদে নববীর ভেতর। এখানে যেতে হলে সহজ উপায় হচ্ছে মসজিদে নববীর ২২নং গেট দিয়ে গেলে হাতের ডান দিকে পড়ে, আর ২১নং গেট দিয়ে গেলে হাতের বাম দিকে পড়ে। তবে যেহেতু সকলেই বিষয়টি জানেন না, তাই এ স্থানটিতে কার্পেট দিয়ে ঢাকা থাকে।
কারণ যেহেতু এটি মসজিদে নববীরে মধ্যে রয়েছে, আর এটি জানতে পারলে সকলেই এখানে নামাজ আদায় করতে হুড়োহুড়ি করতে পারে এই শঙ্কায় এটি কার্পেট দিয়ে ঢাকা থাকে।
তবে কার্পেট উঠালে চেনার সহজ উপায় হচ্ছে, এ স্থানটিতে ৩টি গোল চিহ্ন দেয়া আছে। এর কারণ একটি গোল চিহ্ন বোঝানো হয়েছে যেখানে খেজুর গাছ ছিলো, অন্যটি যেখানে নবীজী বসতেন এবং অপরটি যেখানে কুয়াটি ছিলো। এ ঘটনাটি অনেকেরই অজানা। তবে যারা জানেন, তাঁরা এখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করে থাকেন। নামাজ শেষে দুআ করেন। কারণ এটি দুআ কবুলের অন্যতম একটি স্থান।