হজযাত্রীদের বহনকারী সৌদি এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া, যাচ্ছেতাই সেবা, শিডিউল বিপর্যয় ও অপেশাদার আচরণসহ নানা হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বছরের পর বছর এ এয়ারলাইন্সকে যাত্রী নেয়ার দায়িত্ব দেয়ার কারণে তারা যা ইচ্ছে তাই করছে। এমন কি ‘মনোপলি’ মার্কেট তৈরি করে অতিরিক্ত ভাড়াও নিচ্ছে। অনেকে বলছেন, করোনাকালীন লোকসান পুষিয়ে নিতে হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগসাজশে যাত্রীদের থেকে আদায় করা হচ্ছে এই বাড়তি ভাড়া। আবার বিমানের ভাড়া কত তা টিকিটে উল্লেখ থাকছে না। কিন্তু এজেন্সিগুলো বলছে বিমানে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। যাত্রীরা বাধ্য হয়েই এজেন্সিগুলোর দাবি পূরণ করছেন।
আক্তার হোসেন নামে একজন ভুক্তভোগী দৈনিক জবাবদিহিকে বলেন, সৌদি এয়রলাইন্সের স্বেচ্ছাচারিতা দিনকে দিন বাড়ছেই। তিনি বলেন, হাজীরা হজ করে ফেরার সময় যে জিনিসটি গুরুত্বের সঙ্গে দেশে আনতে চান তা হলো যমযমের পানি। অন্য এয়ারলাইন্সে হাজীদের জন্য এ সুযোগ থাকলেও শুধু সৌদি এয়ারলাইন্সে এ সুযোগ নেই। আবার এজেন্সিগুলো দাবি করে বিমানে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়, কিন্তু সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানের টিকিটে ভাড়া উল্লেখ থাকে না। ফলে জানার কোনো সুযোগ নেই আসলে কত টাকা ভাড়া নিচ্ছে এয়ারলাইন্স। এতে একদিকে যেমন যাত্রীরা ঠকছেন, অপরদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ যাত্রী আরও অভিযোগ করেন, সৌদি এয়ারলাইন্সে অপেশাদার আচরণ এতটাই যে, একজন রোজাদার যাত্রীর জন্য ইফতারের ব্যবস্থাও থাকে না। বিমান যখন এয়ারপোর্টে পৌঁছায় তখন ইফতারের সময় থাকে সীমিত। এ সময়ে নতুন জায়গাতে গিয়ে একজন রোজাদার কীভাবে ইফতার করবেন? অব্যবস্থাপনার আরও দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, আমরা যখন দেশে ফিরে আসি, বিমান বন্দরে এসে টিকিটের সঙ্গে লাগেজের কোনো টোকেন দেয়া হয় না। ফলে লাগেজ মিসিং হলেও অভিযোগের শক্তিশালী প্রমাণ দেয়া কঠিন। তিনি আরও বলেন, আমি গত ৪ মে ওমরা করে দেশে ফিরেছি, আমার দুটি লাগেজ তখন রেখে দেয়া হয়েছে। একটি ফেরত দেয়া হলেও অপরটির খোঁজ আজও মেলেনি। বারবার অভিযোগ করেও আমি কোনো ফল পাচ্ছি না।
নাজিম উদ্দিন নামে আরেক যাত্রী বলেন, হজ পালনে দুটি এয়ারলাইন্স ছাড়া বিকল্প না থাকায় নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, একজন হাজী যমযমের পানি আনতে পারবেন না এটা কোন ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। একজন রোজাদারের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা থাকবে না এটা অপেশাদারির পরিচয় ছাড়া কি হতে পারে। এগুলো কর্তৃপক্ষ নজর না দিলে এ হয়রানি বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, আমরা যারা হজ করতে যাই তাদের উচিত সৌদি এয়ারলাইন্স বয়কট করা। এজেন্সিগুলোকে আগেই বলে দিতে হবে, সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানে আমরা ভ্রমণ করব না। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও যদি নজরদারিতে আনে তাহলে এ হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পাবেন যাত্রীরা। পাশাপাশি দুর্নীতির মাধ্যমে যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে সেটিও বন্ধ হবে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সৌদি এয়ারলাইন্স ও বাংলাদেশ বিমানের বাইরে তৃতীয় কোনো এয়ারলাইন্সকে যদি হজ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তাহলে তাদের একচেটিয়া ব্যবসা কমে আসবে। হজযাত্রীরাও কম খরচে এবং ভোগান্তি ছাড়া হজে যেতে পারবেন। ভালো সেবার একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাবের কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিমানের অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা হজযাত্রীরা অনেক হেনস্তার শিকার হচ্ছি। বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স গত কয়েক বছর ধরে একটি সিন্ডিকেটের মতো করে রেখেছে বলা যেতে পারে। সাধারণত যেকোনো রুটে এয়ারলাইন্সগুলো পৃথক পৃথকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করে। যখন একসঙ্গে একই ভাড়া নির্ধারিত হয়, তখন বুঝতে হবে এখানে কোনো সমস্যা আছে। যেমন কোনো যাত্রী যদি হজের টাকা জমা দেয়ার পর মারা যান, সেই যাত্রীর টিকিটের নাম বদলে অন্য যাত্রী পাঠাতে তারা (বিমান ও সাউদিয়া) ৩০০ মার্কিন ডলার নেয়। কেউ যদি কাগজপত্র বা অন্য ত্রæটির কারণে ফ্লাইট পরিবর্তন করতে চায়, সেক্ষেত্রে দুই এয়ারলাইন্সই ৩০০-৫০০ ডলার ফি নেয়। তারা এসব ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয় না, বরং টাকা দিয়েও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিমান) মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল দৈনিক জবাবদিহিকে বলেন, এসব অনিয়মের লিখিত অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে (নাম্বার- ০১৭১৩-০৩০৬৫০) কয়েক বার যোগাযোগ করা হলেও কোনো প্রতি উত্তর পাওয়া যায়নি।
ধর্মপ্রাণ হাজীদের নমনীয়তার সুযোগ নিয়ে এই এয়ারলাইন্সের হঠকারী আচরণ নিন্দনীয় বলে অবহিত করছেন যাত্রীরা। তাদের কথা সৌদি আরবের ওপর মুসল্লিদের নানা কারণে দুর্বলতা রয়েছে। আর সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এয়ারলাইন্সটি দীর্ঘদিন ধরে একচেটিয়া ব্যবসা করে চলেছে, যা অন্যায়।
-জ/অ