প্রকাশ: বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:১৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর দেশটির নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্ববধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মদ আল-বশির। ২০২৫ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত তিনি এই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মোহাম্মদ আল-বশির।
বিদ্রোহীদের ১২ দিনের ঝটিকা অভিযানে রাজধানী দামেস্ক দখল হওয়ার আগে মোহাম্মদ আল-বশির বিদ্রোহীদের-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট (এসএসজি) এর প্রধান ছিলেন।
আল-জাজিরা জানায়, এই স্যালভেশন গভর্নমেন্ট ২০১৭ সালে ইদলিব প্রদেশে গঠিত হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত জনগণকে সহায়তা করা। এ সরকারের ছিল নিজস্ব মন্ত্রীসহ বিভিন্ন বিভাগ এবং বিচারিক ও নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষও। এসএসজি সরকারে এর আগে বশির উন্নয়নমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
হায়াত তাহরির আল-শাম বিদ্রোহী গোষ্ঠীর (এইচটিএস) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মোহাম্মদ আল-বশিরের। বাশার আল- আসাদ পতনের অভিযানে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি নেতৃত্ব দিয়েছে। আসাদের পতনের আগে থেকেই ইদলিব প্রদেশ ছিল হায়াত তাহরির আল–শাম এর নিয়ন্ত্রণে। সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট (এসএসজি) কার্যত তাদেরই নেতৃত্বাধীন সরকার।
এসএসজি পরে আলেপ্পোতেও কার্যক্রম শুরু করে। আসাদ পতনের অভিযানে আলেপ্পো ছিল বিদ্রোহীদের দখল করা প্রথম প্রধান শহর। বিদ্রোহীদের বিদ্যুৎগতির আক্রমণে গত রোববার পতন হয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের।
এরপরই সামনে আসে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি। আল-বশিরকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করার খবর সোমবারই গণমাধ্যমে এসেছে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করল বিদ্রোহীরা।
সোমবার ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বাশার আল আসাদ সরকারের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জালালি ও আল-বশিরের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। পরে আল-জালালি সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজি থাকার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানানোর পর আল-বশিরকে নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হলো।
আল-বশির ১৯৮৩ সালে ইদলিবের জাবাল আল-জাউইয়া শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। আলেপ্পো ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে লেখাপড়া সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর শরিয়াহ ও আইন নিয়ে লেখাপড়া করেন ইদলিব ইউনিভার্সিটিতে।
ইংরেজি ভাষা, প্রশাসনিক পরিকল্পনা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়েও তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিরোধী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনে যোগদানের আগে তিনি সিরীয় একটি গ্যাস কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন তিনি।
পরে ২০২১ সালে সেই চাকরি ছেড়ে ইদলিবে বিদ্রোহীদের দলে যোগ দেন আল-বশির। ২০২২ ও ২০২৩ সালে সালভেশন গভর্নমেন্টের উন্নয়ন এবং মানবিক কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রী হিসাবে কাজ করেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইদলিব প্রশাসনের শুরা কাউন্সিল বশিরকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে।
সিরিয়ায় এখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলো পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তাকে।